ব্যক্তিগত ফাইন্যান্সের মৌলিক নিয়ন্ত্রণ: বাজেট, সঞ্চয় ও ঋণ ব্যবস্থাপনা
দৈনন্দিন বাজেট তৈরি, সঞ্চয় বাড়ানো ও ঋণ কমানোর প্রমাণিত কৌশল ও বাস্তব টিপস

বাজেট তৈরি ও বাস্তবায়ন
বাজেট মানে টাকা ধরে রাখা নয়, বরং টাকার কথা স্থিরভাবে বোঝা। মাসিক আয় থেকে খাবার, ভাড়া, ট্রান্সপোর্ট এবং মোবাইল রিচার্জ পর্যন্ত সব খরচ তালিকা করে রাখুন। বাংলাদেশে অনেকেই নগদে খরচ করেন, তাই পকেটমানি বা হ্যান্ডক্যাশ আলাদা রাখতে পারলে পরিকল্পনা সহজ হয়।
একটি সহজ নিয়ম হলো 50/30/20 পারস্পরিক ভাগ করে নেওয়া: জরুরি খরচ ৫০%, ইচ্ছাপূরণ ৩০%, সঞ্চয় ও দায় ২০%। গত তিন মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট বা বিকাশ নোটিশ দেখলে খরচের প্যাটার্ন চোখে পড়ে। কাগজ পেন কিংবা সিম্পল অ্যাপ ব্যবহার করে প্রতিদিন খরচ নথিভুক্ত করুন এবং মাস শেষে সমন্বয় করুন।
সঞ্চয় গঠন: জরুরি তহবিল ও ছোট ইনভেস্টমেন্ট
প্রথম লক্ষ্য হওয়া উচিত জরুরি তহবিল গড়ে তোলা, যে তহবিল ৩-৬ মাসের জীবিকা চালাতে পারে। যদি মাসিক ব্যয় ৩০,০০০ টাকা হয়, তাহলে কমপক্ষে ৯০,০০০ থেকে ১,৮০,০০০ টাকা জমা রাখা জরুরি। সঞ্চয় রাখতে পারলে মানসিক চাপ কমে এবং বাড়তি সুদের ঋণ নেওয়ার ঝুঁকি কমে।
বিকাশ বা নগদে অল্প অল্প করে রাখতে পারেন, আর নিয়ম করে FD বা ব্যাংকের স্বল্পকালীন জমা খুঁজে দেখুন। ছোটো পরিমাণেই নিয়মিত ইনভেস্টমেন্ট শুরু করুন, যেমন মাইক্রো ইনভেস্টমেন্ট অ্যাপ বা সরকারি বন্ডে। লোকাল প্রাইভেট ব্যাংক ও পেনশন স্কিমগুলোও বিবেচনা করুন, ঝুঁকি ও সময়সীমা মিলিয়ে নেওয়া ভালো।
ঋণ ব্যবস্থাপনা: কিস্তি, সুদ ও প্রাধান্য নির্ধারণ
ঋণ নেওয়ার আগে সুদের হার, চুক্তি সময় এবং জরিমানা শর্ত সাবধানে পড়ুন। ব্যক্তিগত ঋণ বা ক্রেডিট কার্ডের সুদ সাধারণত বেশি হয়, তাই এগুলো আগে পরিষ্কার করা ভালো। যদি করা অনেক ঋণ থাকে, তাহলে উচ্চ সুদের ঋণগুলো প্রথমে চুকিয়ে ফেলার কৌশল নিতে চেষ্টা করুন।
বিকল্প হিসেবে কেবল সঞ্চয় নয়, রিফাইন্যান্সিং বা ঋণের সমন্বয়ও করা যায় যাতে মাসিক কিস্তি কমে। স্থানীয় ব্যাংক গ্রাহকসেবায় যোগাযোগ করে সমন্বয় পরিকল্পনা নিন। কিস্তি মিস করলে জরিমানা ও ক্রেডিট স্কোর ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, তাই সময়মত পেমেন্ট সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিন।
আদত ও আয়ের বহুমুখীকরণ
অল্প সময়ে ছোটো সেকেন্ডারি আয় থেকে আর্থিক স্থিতি নড়ে না, কিন্তু ধীরে ধীরে তা বড় প্রভাব ফেলে। ফ্রিল্যান্স কাজ, টিউশন, অনলাইন বিক্রি বা হস্তশিল্প বিক্রির মতো অপশন ভাবুন। গ্রামের বাজার কিংবা শহরের লোকাল চাহিদা অনুযায়ী সাইড বিজনেস করলেই আয় বাড়ে।
আদত বদল করাও বড় ভূমিকা রাখে: অবাঞ্ছিত সাবস্ক্রিপশন ছেড়ে দিন, খাদ্যবহুল রুটিন সামলে খাওয়া কমান, সেভিং অটোমেট করে দিন। ছোটো লক্ষ্য ঠিক করুন এবং প্রতিযোগিতামূলক লক্ষ্য অর্জন করলে নিজেকে পুরস্কৃত করুন। আজই একটি ছোট টাস্ক নিয়ে শুরু করুন এবং তিন মাস পর আপনার আর্থিক চিত্র বদল আসবে।